NOBEL PRIZE 2018
“নোবেল পুরস্কার ২০১৮”
১লা অক্টোবর থেকে ৮ই অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষিত হল ২০১৮ সালের নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের নাম ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
১লা অক্টোবর প্রথম ঘোষিত হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল প্রাপকদের নাম ।
এই বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন আমেরিকার জেমস অ্যালিসন এবং জাপানের তাসুকু হঞ্জো। ক্যানসার প্রতিরোধে ‘ইমিউনোথেরাপি’ নামক চিকিৎসা পদ্ধতি সফল ভাবে প্রয়োগ করার জন্যই জেমস অ্যালিসন এবং তাসুকু হঞ্জো পেলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার । তাঁরা শরীরের ‘ইমিউনো সেল-এ একটি প্রোটিনের সন্ধান দিয়েছেন , যা কি না ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে সক্ষম। সেই প্রোটিনটি শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে টিউমারের উপর আঘাত হানতে সাহায্য করে।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
২রা অক্টোবর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন কানাডার ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড,আমেরিকার আর্থার অ্যাশকিন ও ফ্রান্সের জেরার্ড মুরো ।
কানাডার ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড বিশ্বের তৃতীয় মহিলা যিনি পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন । এর আগে ১৯০৩-এ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান মারি ক্যুরি আর ১৯৬৩-তে পান মারিয়া গেপার্ট মেয়ার। দুজনেই ছিলেন পোল্যান্ডের বাসিন্দা।
এছাড়াও মার্কিন নাগরিক আর্থার অ্যাশকিনও গড়েছেন আরেকটি রেকর্ড । তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে (৯৬ বছর) নোবেল পুরস্কার পেলেন । এর আগে বয়সে এত প্রবীণ কেউ নোবেল পাননি।
ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড,আর্থার অ্যাশকিন ও জেরার্ড মুরো এবছর নোবেল পান লেসার রশ্মির যুগান্তকারী প্রয়োগের জন্য । চিমটের মত লেসার রশ্মিকে ব্যবহার করে খুব ছোট ছোট কণা, পরমাণু আর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস বা জীবন্ত কোষগুলিকে আটকে ধরে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব করে তুলেছেন তাঁরা । এমনকি তাদের নড়ানো, চরানো যাবে। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রের গতি ও কার্যক্ষমতা অনেক গুণ বাড়াবে। বানানো যাবে আরও শক্তিশালী সোলার সেল। আরও ভাল অণুঘটক। চিমটের মত লেসার রশ্মির ‘দুই আঙুল (টুইজার) এর সাহায্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা, কণিকা, পরমাণু, ভাইরাসদের জাপটে ধরার কাজটা মূলত করেছিলেন অ্যাশকিন।
আর ডোনা আর জেরার্ডের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতেই লেসার রশ্মিকে বহু গুণ শক্তিশালী করা সম্ভব হয়েছে ।
রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
৩রা অক্টোবর রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন আমেরিকার ফ্রাঁসে এইচ আর্নল্ড, জর্জ পি স্মিথ ও ফ্রান্সের স্যর গ্রেগরি পি উইন্টার। ফ্রাঁসে এইচ আর্নল্ড বিশ্বের চতুর্থ মহিলা হিসাবে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন । এর আগে যে তিনজন মহিলা রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন তাঁরা হলেন মারি ক্যুরি (১৯১১), তাঁর মেয়ে আইরিন ক্যুরি (১৯৪৭) এবং ডরোথি ক্রাউফুট হজকিন (১৯৬৪)।
ফ্রাঁসে এইচ আর্নল্ড এবছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন উৎসেচক বা এনজাইমের কাজ করার ওপর । উৎসেচককে ইচ্ছামত অনুঘটক হিসাবে চালনা করে কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে নতুন নতুন প্রোটিন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন ফ্রাঁসে। ফলে বিরুপ পরিবেশে মানুষের জীবনীশক্তিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলতে পারবে । এছাড়াও উৎসেচক অণুঘটক হিসেবেই ওষুধ বানাতে ও অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনের সহায়ক হবে। ফলে, ওই কাজগুলি অনেক সহজ ও সস্তা হয়ে যাবে।
স্মিথ ও উইন্টার কাজ করেছেন ‘ব্যাকটেরিওফাজ নামক ভাইরাস নিয়ে ।তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতির নাম- ‘ফাজে ডিসপ্লে’। ফাজ ভাইরাসকে কাজে লাগিয়ে শরীরে ব্যাকটেরিয়া গুলিকে ধ্বংস করতে সাহায্য করবে এই পদ্ধতি । তৈরি হবে রোগ প্রতিরোধকারী নতুন নতুন ওষুধ ।এই ওষুধ গুলি প্রয়োগ করে শরীরের অ্যান্টিবডিগুলিকে নিজেদের ইচ্ছা মতো চালনা করা সম্ভব হবে । এই পদ্ধতিতে ইতিমধ্যেই জন্ম নিয়েছে একটি জৈব যৌগ। আদালিমুমাব। যা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও সোরিয়াসিস সারাতে খুব কাজে লাগে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার
৫ই অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইরাকের কুর্দি মানবাধিকারকর্মী নাদিয়া মুরাদ ও কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েজি।মুকওয়েজি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক কঙ্গোর শহর বুকাবোর পানজি হাসপাতালে যৌন উৎপীড়নের শিকার মহিলাদের চিকিৎসা করেন। এখন পর্যন্ত তিনি ও তার সহকর্মীরা মিলে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন প্রায় তিন হাজার ব্যক্তির চিকিৎসা করেছেন।
মুরাদ হচ্ছেন একজন ইয়াজিদি নারী। উল্লেখ্য, ইরাকে ইয়াজিদিরা সংখ্যালঘু। ২০১৪ সালে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস প্রায় ৩০০০ ইয়াজিদি নারী ও বালিকাকে অপহরণ করে তাদের ধর্ষণ করে ও বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করে। অপহৃত নারী ও বালিকাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মুরাদ।
আইএস জঙ্গিরা নাদিয়া ও অন্য নারীদের মসুল শহরে যৌনদাসী হিসেবে করে দেন । আইএসের যৌনদাসী হিসেবে বেশ কিছুদিন থাকার পর পালিয়ে আসেন নাদিয়া ।
আইএসের কাছ থেকে পালিয়ে আসার পর নাদিয়া মুরাদ রাষ্ট্রপুঞ্জের শুভেচ্ছাদূত হন।তিনি বর্তমানে আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দী ইয়াজিদি নারী ও যাঁরা পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করছেন ।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার
৮ই অক্টোবর ঘোষিত হল অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপকের নাম । অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারকে ‘ভেরিজ রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার’ও বলা হয়ে থাকে।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ডি. নরডাস ও পল এম. রোমার।
জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি অর্থনীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় সেই নিয়ে বিশ্লেষণের স্বীকৃতি হিসেবে উইলিয়াম ডি. নরডাসকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
আর কী ভাবে নতুন নতুন ধারণা দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় তা বিশ্লেষনের জন্য পল এম রোমারকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য ,এই বছর সাহিত্যে কোন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবেনা ।
পরের বছর মানে ২০১৯ সালে ঘোষিত হবে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের সাহিত্যে নোবেল প্রাপকদের নাম ।
যৌন হয়রানি সংক্রান্ত ‘সংকটের’ কারণে এ বছর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হবে না বলে জানিয়েছে সুইডিশ অ্যাকাডেমি।গত নভেম্বর মাসে একটি সুইডিশ দৈনিক ১৮ জন মহিলার বিবৃতি প্রকাশ করে, যারা দাবি করেছেন যে, সুইডিশ অ্যাকাডেমির সদস্য কাটারিনা ফ্রস্টেনসনের স্বামী এবং ফরাসি চিত্রগ্রাহক জাঁ-ক্লোদ আর্নো তাদের যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। শুধু যৌন হেনস্থা নয়, প্রাক্তন সাত নোবেলজয়ীর নাম ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল আর্নোর বিরুদ্ধে।আর্নোকে নিয়ে বিতর্ক ওঠায় গত বছর নভেম্বর থেকে মোট ৮ জন সদস্য অ্যাকাডেমি থেকে পদত্যাগ করেছেন। যেহেতু অ্যাকাডেমির ১৮ সদস্যের জুরির মধ্যে ১২ জনের অনুমোদন লাগে পুরস্কার ঘোষণা করতে। এখন মাত্র ১০ সক্রিয় সদস্য থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
১৯০১ সালে শুরু হওয়া নোবেল পুরস্কার ঘোষণায় ছেদ পড়েছিল সাত বার। তবে কোনও কেলেঙ্কারির জন্য নোবেল ঘোষণা বন্ধ থাকার ঘটনা এই প্রথম ঘটল।
আগামী ১০ই ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবসে এই পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলেদেওয়া হবে ।৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার) নগদ অর্থ পুরস্কার পাবেন তাঁরা ।
প্রতি বছর একই বিষয়ে সর্বোচ্চ তিনজনকে পুরস্কার দেয়া যায়।
জর্জ বার্নার্ড শ একমাত্র ব্যক্তি যিনি নোবেল পুরস্কার এবং অস্কার অ্যাওয়ার্ড, উভয় পুরস্কারই লাভ করেছেন।
নোবেল পুরস্কার প্রদানের ইতিহাসে মাত্র চারজন ব্যক্তি দুইবার নোবেল বিজয়ের সম্মান লাভ করেছেন। এরা হলেন: মেরি কুরি,লিনাস পাউলিং,জন বারডিন এবং ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। মোট ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হল: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি।
সুয়েডীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেদ নোবেলের(ডিনামাইট আবিষ্কারক ) ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল-এর মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়।
শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে। বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়েছে ১৯৬৯ সালে।অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার , “আলফ্রেড নোবেল স্মৃতি রক্ষার্থে অর্থনীতিতে ভেরিজ রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার ” নামে দেওয়া হয়ে থাকে ।
Tag:Current Affairs, GK, IAS, Nobel Award 2018, Nobel Prize 2018, WBCS